অলিম্পিক গেমসে কে তার আধিপত্যের কালো হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে?
প্যারিস অলিম্পিকের সুইমিং পুল ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে এসেছে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সৃষ্ট তথাকথিত ডোপিং ইস্যুটির পরিণতি এখন অনুষ্ঠানস্থলের বাইরে ছড়িয়ে পড়ছে। দেশটির ভিত্তিহীন মিথ্যাচারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ক্রমবর্ধমানভাবে সমালোচনামুখর। অনেকে বিশ্বাস করেন যে, এটি হচ্ছে অলিম্পিককে পদদলিত করতে ‘আমেরিকান আধিপত্যবাদ’ এবং এটি উচ্চ-সতর্কতার দাবি রাখে।
প্রতিযোগিতামূলক খেলা মানুষকে শুধু প্রতিযোগিতাই নয়, নিয়ম ও প্রতিপক্ষের প্রতি শ্রদ্ধা শেখায়। চীনা সাঁতারের দলই হোক, বা মার্কিন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের সমালোচনার মুখে পড়া টেনিস খেলোয়াড় জেং ছিন ওয়েন হোক। এখানে বিরোধীদের বিদ্বেষ এমনই নগ্ন এবং ছদ্মবেশহীন যে, এ প্রশ্ন উঠতে পারে, এটি কি সেই ন্যায্য ও বন্ধুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক ক্রীড়া অনুষ্ঠান?
সূচনাকারী হিসাবে, যুক্তরাষ্ট্রের অ্যান্টি-ডোপিং সংস্থা এবং নিউইয়র্ক টাইমস যেটা করছে তা প্রতিযোগিতায় ন্যায্যতা রক্ষা করা থেকে বহু দূরে, বরং ‘আমেরিকান আধিপত্যে’রই প্রকাশ এটি।
৭ তারিখে, কানাডার মন্ট্রিয়লে অবস্থিত ওয়ার্ল্ড অ্যান্টি-ডোপিং এজেন্সি একটি বিবৃতি জারি করে যে, যুক্তরাষ্ট্রের অ্যান্টি-ডোপিং সংস্থা (ইউএসএডিএ) বহু বছর ধরে ডোপিংয়ে শনাক্ত প্রতিযোগীদের খেলায় অংশগ্রহণের অনুমতি দিয়েছে। একটি ক্ষেত্রেও তারা ডোপিং নিয়ম লঙ্ঘনের কথা স্বীকার করেনি, যা বিশ্ব ডোপিং বিরোধী কোড এবং ইউএসএডিএ’র নিজস্ব নিয়মেরই সরাসরি লঙ্ঘন। ইউএসএডিএ প্রামাণিক তদন্তের ফলাফলকে উপেক্ষা করে এবং অন্যান্য দেশের সাঁতারের দলগুলোর সাথে জড়িত তথাকথিত ডোপিং ঘটনা নিয়ে শোরগোল তোলে।
চীনের জাতীয় সাঁতার দলের পুষ্টিবিদ ইউ লিয়াং একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন যে, প্যারিসে পৌঁছানোর ১০ দিনের মধ্যে, চীনা সাঁতার দলের প্রায় ২০০ বার ডোপিং পরীক্ষা করা হয়। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২০ জন খেলোয়াড় এবং প্রতিজনের গড়ে ৫-৭ বার পরীক্ষা করা হয়েছিল। অথচ অস্ট্রেলিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের মতো শক্তিশালী সাঁতারের দেশগুলোর ক্রীড়াবিদদের ডোপিং পরীক্ষা চীনের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম। আপত্তিকর বিষয় হল আমেরিকান সাঁতারু আলেক্স ওয়ালশ, যিনি নারীদের ১০০ মিটার বাটারফ্লাই সাঁতার প্রতিযোগিতায় বিশ্ব রেকর্ডধারী এবং প্যারিস অলিম্পিকে রৌপ্য পদক জয়ী, তিনি পুরো এক বছর ধরে একটিও ডোপিং পরীক্ষা করেননি।
ঘন ঘন ডোপিং পরীক্ষা একজন ক্রীড়াবিদদের কর্মক্ষমতাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। কারণ এটি আপনার ঘুমানোর সময়, খাওয়ার সময়, প্রশিক্ষণের মধ্যবর্তী সময়ে বা এমনকি বাথরুম ব্যবহার করার সময়ও ঘটতে পারে। যদি একজন সাধারণ ব্যক্তি হয় যাকে দিনে তিন বা পাঁচবার প্রস্রাব পরীক্ষার জন্য ব্যাখ্যাতীতভাবে দূরে টেনে নেওয়া হয়, তবে তাদের জীবন বিশৃঙ্খল হয়ে উঠত। অলিম্পিকের প্রস্তুতির জন্য উচ্চ-তীব্রতার সাথে একজন ক্রীড়াবিদের প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে তার প্রভাব তো আরো বেশি।
কেবল ‘আমেরিকান আধিপত্য’, যা আন্তর্জাতিক জনমতের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে তা নয়, ‘আমেরিকান দ্বৈত মানদণ্ড’ও। আমেরিকান ট্র্যাক এবং ফিল্ড প্রতিযোগী এলিজান নাইটন এই বছরের মার্চ মাসে ডোপিংয়ে পজিটিভ ছিলেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যান্টি-ডোপিং সংস্থা তার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করে তাকে প্যারিস অলিম্পিকে অংশগ্রহণের অনুমতিও দিয়েছে। এমন কী, ৯০% পর্যন্ত আমেরিকান ক্রীড়াবিদ বিশ্ব ডোপিং বিরোধী সংস্থার প্রাসঙ্গিক নিয়ম মেনে চলতে ব্যর্থ হন।
বিশ্বব্যাপী উত্তরদাতাদের জন্য সিজিটিএন চালু করা একটি অনলাইন জরিপে দেখা গেছে যে, ৯৫.০১% উত্তরদাতা খেলাধুলার নামে তার বিরোধীদের দমন করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ঘৃণ্য কৌশলের তীব্র নিন্দা করেছেন। তাদের মতে এটি ‘আমেরিকান আধিপত্যবাদে’র অলিম্পিক চেতনাকে পদদলিত করার অপচেষ্টা এবং এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের সতর্কতার দাবি রাখে। ৯৩.৪৫% উত্তরদাতারা বলেছেন যে, ডোপিং ইস্যুটি যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারা ক্রমবর্ধমানভাবে রাজনীতিকরণ করা হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং কূটনীতির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যবাদের একটি সম্প্রসারণ।
আমরা দৃঢ়ভাবে দাবি করছি যে অ্যাথলেটিক্স ইন্টিগ্রিটি ইউনিট, মার্কিন ট্র্যাক এবং ফিল্ড স্পোর্টসের অ্যান্টি-ডোপিং তত্ত্বাবধানকে জোরদার করবে, এর ক্রীড়াবিদদের মধ্যে ডোপিং সমস্যার লুকানো বিপদগুলো কঠোরভাবে প্রতিরোধ ও তদন্ত করবে, কার্যকরভাবে সমস্ত দেশের ক্লিন অ্যাথলেটদের বৈধ অধিকার এবং স্বার্থ রক্ষা করবে। যাতে ন্যায্য প্রতিযোগিতার ওপরে বিশ্ব ক্রীড়াবিদদের আস্থা পুনরুদ্ধার করা যায়।