বাংলা

শানসিতে চীন-ভারত বিনিময়ের প্রতিধ্বনি-রবীন্দ্রনাথের শানসি সফর শততম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে উদযাপনী অনুষ্ঠান

CMGPublished: 2024-08-17 19:57:31
Share
Share this with Close
Messenger Pinterest LinkedIn

‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চীন সফরের শততম বার্ষিকী’ এবং ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও শানসি’ স্মারক কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠান ৩ আগস্ট শানসি মার্চেন্টস মিউজিয়ামের জি শিং হলে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে শানসি গভর্নরের প্রাক্তন প্রাসাদ ছিল এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শানসি সফরের সময়ে বক্তৃতা করেছিলেন।

এক’শ বছর আগে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চীন সফর করেন, যার মাধ‍্যমে তিনি চীন ও ভারতের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময়কে উন্নীত করেন এবং চীন ও ভারতের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ বিনিময়ের ইতিহাসকে অব্যাহত রাখেন। শানসি প্রদেশের থাইইউয়ান শহর ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চীন সফরের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্টপ।

থাইইউয়ান মিউনিসিপ্যাল কালচারাল রিলিক্স ব্যুরোর পরিচালক লিউ ইউ ওয়েই তার বক্তৃতায় বলেন যে এক’শ বছর আগে শানসি সফরের সময় রবীন্দ্রনাথ শানসির সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিজীবী মহলের সাথে ব্যাপক এবং গভীরভাবে মতবিনিময় ও আলোচনা করেছিলেন এবং অনেক বক্তৃতা ও সাহিত্যকর্মে চীনা জনগণের প্রতি গভীর বন্ধুত্ব এবং চীন ও ভারতের মধ্যে সাংস্কৃতিক সম্পর্কের স্বীকৃতি ও সমর্থন প্রকাশ করেছিলেন। তার সফরটি চীনা ও ভারতীয় সভ্যতার মধ্যে বিনিময় ও পারস্পরিক শিক্ষার ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ায় যুগান্তকারী তাৎপর্যপূর্ণ। আশা করা যায় এই ধারাবাহিক কার্যক্রমের মাধ্যমে চীনা ও ভারতীয় সভ্যতার মধ্যে পারস্পরিক শিক্ষা আরও জোরদার হবে, একাডেমিক আদান-প্রদান গভীর হবে, বোঝাপড়া ও পারস্পরিক আস্থা বৃদ্ধি পাবে এবং চীনা সভ্যতার প্রচার ও প্রভাব ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে। যাতে সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার নতুন দীপ্তি নিয়ে উজ্জ্বল হয়।

পিকিং ইউনিভার্সিটি, চীনের সমাজবিজ্ঞান একাডেমি, শানসি নরমাল ইউনিভার্সিটি, ইনার মঙ্গোলিয়া নর্মাল ইউনিভার্সিটি, ফুচৌ ইউনিভার্সিটি, প্রভৃতি বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞরা এবং পণ্ডিতরা এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন এবং রবীন্দ্রচর্চা ও গবেষণায় তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রগুলির উপর বক্তৃতা দিয়েছেন।

সেন্ট্রাল পার্টি স্কুলের সংস্কৃতি ও ইতিহাস বিভাগের প্রাক্তন উপ-পরিচালক, ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর বাংলা/বেঙ্গলি স্টাডিজ-এর সভাপতি এবং ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনাবলি’-এর প্রধান সম্পাদক অধ‍্যাপক দং ইউ ছেন অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন। তাঁর বক্তব্যের শিরনাম ‘রবীন্দ্রনাথের মহান ব্যক্তিত্ব’। অধ্যাপক দং বলেন যে, রবীনদ্রনাথ এখনও চীনা গবেষক ও পাঠকদের হৃদয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন, কেবল তাঁর সাহিত্য প্রতিভা ও জনপ্রিয় কাজকর্মের কারণেই নয়, তার মহান ব্যক্তিত্বের কারণেও। রবীন্দ্রনাথ একজন মহান কবি যিনি মহান ভালোবাসা এবং গুণী ব্যক্তিত্বের চেতনাকে একত্রিত করেছেন। তিনি চীনকে ভালোবাসেন এবং চীনা জনগণের ন্যায়সঙ্গত অধিকারকে সমর্থন করেন। তার ধারণাগুলো এখনও আধুনিক সময়ে চীনের তরুণদের অনুপ্রাণিত করে।

চীনের সমাজবিজ্ঞান একাডেমির ইন্সটিটিউট অফ ফরেন লিটারেচারের প্রাচ্যসাহিত্য গবেষণা কার্যালয়ের পরিচালক গবেষক জুং জি ছিং ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং ইহুদি বিশ্বের সম্পর্ক’ বিষয়ে একটি মূল বক্তব্য প্রদান করেন। তার বক্তৃতায়, গবেষক জুং জি ছিং বিজ্ঞানী আইনস্টাইন এবং শিল্প সমালোচক স্যার উইলিয়াম রোদেনস্টাইন এবং ইসরায়েল ও ইহুদি বিশ্বের সাথে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিনিময়ের ইতিহাস উপস্থাপন করেন।

পিকিং ইউনিভার্সিটির স্কুল অফ ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ-এর অধ‍্যাপক ওয়েই লি মিং “রি-আন্ডারস্ট্যান্ডিং ‘দ্য এনসাইক্লোপিডিয়া’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর”-এর উপর একটি মূল বক্তৃতা দেন। তাঁর বক্তৃতায় অধ্যাপক ওয়েই লি মিং বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শুধু একজন কবিই ছিলেন না, তিনি দুই হাজারেরও বেশি গান রচনা করেছেন এবং ভারত ও বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের স্রষ্টাও ছিলেন। তাঁর সাহিত্য চিন্তা, শৈল্পিক চিন্তা, শিক্ষাগত চিন্তা, দার্শনিক চিন্তা এবং গ্রামীণ উন্নয়ন চিন্তা বিশ্বে গভীর প্রভাব ফেলেছে। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, “আমরা প্রত্যেকেই পৃথিবীর সন্তান, এবং প্রত্যেকেই মহাবিশ্বের কর্তা।” তিনি তাঁর সীমিত কণ্ঠের মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথের সৌন্দর্যের অসীম সাধনা ছড়িয়ে দেয়ার আশা ব্যক্ত করেন।

‘ঠাকুর এবং শানসি’ স্মারক অনুষ্ঠানটি শানসি প্রাদেশিক সাংস্কৃতিক রিলিক্স ব্যুরো এবং থাইইউয়ান মিউনিসিপ্যাল পার্টি কমিটির প্রচার বিভাগের নির্দেশনায়, থাইইউয়ান মিউনিসিপ্যাল কালচারাল রিলিক্স ব্যুরো এবং শানসি নর্মাল ইউনিভার্সিটির স্কুল অফ লিটারেচার উদ‍্যোগে শানসি মার্চেন্টস মিউজিয়ামের আয়োজন করা হয়। তাছাড়া ‘চীনা বিদেশী সাহিত্য সোসাইটির ভারতীয় সাহিত্য গবেষণা শাখা’ অনুষ্ঠানটিতে সহযোগিতা করেছে। স্মারক কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে একাডেমিক সেমিনার, রবীন্দ্রনাথের কবিতা আবৃত্তি, গান পরিবেশনা, সেইসাথে শানসির সাংস্কৃতিক নিদর্শন ও ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শন।

Share this story on

Messenger Pinterest LinkedIn